বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া যুগান্তরকে বলেন, আমরা বিমানবন্দরে সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। প্রতিদিন যে সংখ্যায় যাত্রী ও তাদের স্বজনরা বিমানবন্দরে আসেন তাতে দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু সামগ্রিকভাবে পুরো বিমানবন্দর যাত্রীবান্ধব। সবাই আন্তরিকতার সঙ্গেই যাত্রীসেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিমানবন্দরের ভেতরের (এয়ারসাইট) দায়িত্ব পালনের নিয়ন্ত্রণ নেয় এভসেক। এরপর বিমানবন্দরে যাত্রীদের জন্য বেবিচক টেলিফোন বুথ স্থাপন এবং দ্রুত লাগেজ পাওয়ার ব্যবস্থা করাসহ নানা উদ্যোগর কারণে প্রশংসায় ভাসতে থাকে এভসেক। কিন্তু এ প্রশংসা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। যাত্রীদের সঙ্গে কতিপয় এভসেক সদস্যদের দুর্ব্যবহার, মারধর ও মারমুখী আচরণের বিষয়টিও সামনে আসতে থাকে। বিমানবন্দরের টার্মিনাল-১ এর অ্যারাইভাল ক্যানোপিতে এক সিএনজি ড্রাইভারকে বেধড়ক মারধরের মধ্যে দিয়ে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়ায় এভসেক। এরপর যাত্রীদের ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া, নারী যাত্রীকে গায়ে ধাক্কা দেওয়া, ক্যানোপির ভেতর যাত্রীর স্বজনকে প্রকাশ্যে মারধর এবং মানব পাচারকারীকে ধরে ছেড়ে দেওয়াসহ নানা অপেশাদার ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়িত। সর্বশেষ বুধবার নরওয়ে প্রবাসী সাঈদ খানকে ব্যাপক মারধর করে মুখ ও মাথা ফাটিয়ে ফেলার ঘটনা ব্যাপক নেতিবাচক আলোচনার জন্ম দেয়।
বুধবার শুধু একই সময় সাঈদ খান নামে আরও একজনের ওপর হামলার ঘটনা ছাড়াও তার বাবা গিয়াস উদ্দিনসহ পরিবারের ৫ সদস্যকে হেনস্তা করা হয়। এ ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে ৪ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। হামলার শিকার নরওয়ের নাগরিক সাঈদ উদ্দিনের বাবা গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘দেশে বিচার না পেলে ইউরোপীয় ইউনিয়নে বিচার দেব। এ ঘটনার শেষ দেখতে চাই।’ তিনি বলেন, আমি আমার স্ত্রী মনোয়ারা বেগম, আমার ছেলে মহিউদ্দীন, সাঈদ উদ্দিনের স্ত্রী জান্নাত আরা নরওয়ের নাগরিক। বুধবার আমরা সবাই ঢাকায় অবতরণ করি। ইমিগ্রেশন শেষ করে বাইরে আসার পর খেয়াল করে দেখি আমার ছোট ছেলে সাঈদ নেই। পরে ভেতরের দিকে তাকিয়ে দেখি সে আসছে। এরপর গেটের ডানপাশে দাঁড়ালে নিরাপত্তাকর্মী (এভসেক সদস্য) আমাকে বলে, ‘ওই মিয়া এখানে দাঁড়িয়েছেন কেন? সরে দাঁড়ান।’ তখন আমি তাকে বলি, ‘এই কথা আপনি ভালো করে বললেই হয়।’
তিনি বলেন, ‘আমরা শুনছি বিমানবন্দর আগের চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে। লোকজনও প্রবাসীদের স্যার ডাকে। আপনি এরকম আচরণ করছেন কেন? একথা বলার পর সে আমাকে ধাক্কা দেয়। তখন আমার ছোট ছেলে চলে আসে। এ সময় আমার গায়ে হাত দেওয়া দেখে ছেলে সাঈদ রাগান্বিত হয়। তার সঙ্গে কথাকাটাকাটি ও ধাক্কাধাক্কি হয়। পরে উপস্থিত এভসেক সব সদস্য মিলে আমার সামনেই ছেলেকে ধরে মারধর করে।’ তিনি বলেন, ‘বাবার সামনে ছেলেকে রক্তাক্ত দেখা সত্যিই অনেক কষ্টের।’
দিদার হোসেন নামের এক যাত্রীর স্বজন বলেন, এক প্রবাসীকে মারধরের ঘটনা ফেসবুকে দেখেছি। যেভাবে রক্তাক্ত করা হয়েছে তাতে করে এই ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি দাবি করছি। তিনি বলেন, প্রবাসী যাত্রীরা বিমানবন্দরে আসার পর দ্রুত আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে দেখা করার জন্য ছটফট করেন। তাদের ভুলভ্রান্তি হতেই পারে। এ কারণে এভাবে মারধর করাটা কতটা যৌক্তিক?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদেশ থেকে আসা এক যাত্রী বলেন, বিমানবন্দরের কত প্রশংসা। প্রবাসীদের জন্য লাউঞ্জ করল, টেলিফোন বুথ করল, দ্রুত লাগেজ দিল। এখন পরিস্থিতি এমন যে, এভসেক এক প্রকার আতঙ্কের নাম। নাম-পরিচয় দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে কথা বললে ফের দেশের বাইরে যাওয়ার সময় তারা সমস্যা করবে ভেবে আমরাও ভয়ও পাচ্ছি।
এদিকে নরওয়ে প্রবাসীকে মারধর ও হেনস্তার ঘটনায় বিবৃতি দিয়েছে লন্ডন কানেক্ট বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল (সিবিআই) ইউকে। সংগঠনটির পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের জড়িত এ ঘটনা প্রবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। সিবিআই ইউকে বাংলাদেশ সরকারকে এ ঘটনার একটি পূর্ণাঙ্গ ও স্বচ্ছ তদন্ত করে দোষীদের চিহ্নিত করার আহ্বান জানাচ্ছে। বিবৃতিতে এ ঘটনায় সরকারকে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়া এবং ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারের শারীরিক-মানসিক আঘাতের জন্য যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়ারও আহ্বান জানানো হয়।